ডেস্ক: আমরা যত উদারতার কথা বাইরে বলি, ভেতরে তত উদার নই। সমস্যাটি সেখানেই।
ফলে যখন কোনও একটি বিষয় বা ঘটনা বিশ্লেষণ করি তখন তা বড্ড এক পেশে হয়ে যায়।
এক পক্ষের হয়ে যায়। অন্য পক্ষের কথা আমরা শুনি না। দেখি না। বলি না।
ভাবতেও চাই না।
এখানে নারীবাদ বড় ‘পুরুষতান্ত্রিক নারীবাদ‘ হয়ে আছে। পুরুষতান্ত্রিক
ভাবনা-বিশ্বাস, সংস্কার ও সংজ্ঞার বাইরে যেতে পারেননি নারীরাও। ফলে পুরুষের
শিখিয়ে দেওয়া পুঁথি আর বিদ্যা তাদের যুক্তির আধার। এই যুক্তি কখনও কখনও
পুরুষের হাতেই অস্ত্র তুলে দেয়। নারী হয় আত্মঘাতী। নিজেকে সে মানুষ বলেই
ভাবে না, ভাবে সে কেবল ‘মেয়েমানুষ‘, সে কেবল নারী। নিজেকে সে অসম্মানিত
করে, সঙ্গে পুরুষকেও করে।
সময় বদলেছে কিন্তু সমাজ বদলায়নি। ফলে পুরনো বস্তাপচা রীতিনীতি, বিশ্বাস,
পুঁথিগত সংজ্ঞাকে আঁকড়ে ধরে আছি এখনও। প্রথাগত ধারনার বাইরে এসে যুক্তি
দিয়ে, বিজ্ঞান দিয়ে, বাস্তবতা দিয়ে অনেকেই বুঝতে চাই না। এখনও আমাদের
চিন্তার পায়ে পায়ে শেকল। ভাবনার রন্ধে রন্ধে পুরুষতন্ত্র। ফলে এখানে
নারীবাদ বড় ‘পুরুষতান্ত্রিক নারীবাদ‘ হয়ে আছে। পুরুষতান্ত্রিক
ভাবনা-বিশ্বাস, সংস্কার ও সংজ্ঞার বাইরে যেতে পারেননি নারীরাও। ফলে পুরুষের
শিখিয়ে দেওয়া পুঁথি আর বিদ্যা তাদের যুক্তির আধার। এই যুক্তি কখনও কখনও
পুরুষের হাতেই অস্ত্র তুলে দেয়। নারী হয় আত্মঘাতী। নিজেকে সে মানুষ বলেই
ভাবে না, ভাবে সে কেবল ‘মেয়েমানুষ‘, সে কেবল নারী। নিজেকে সে অসম্মানিত
করে, সঙ্গে পুরুষকেও করে।
ধর্ষণ একটি অসভ্য যৌন আচরণ। সহজভাবে বললে, অসভ্য যৌন আক্রমণ। ধর্ষণের সংজ্ঞাটিই ভীষণ পুরুষতান্ত্রিক। এই সংজ্ঞা যতদিন থাকবে, ততদিন কেবল নারীই ধর্ষিত হবে, অসম্মানিত হবে, অপমানিত হবে ও নির্যাতিত হবে। এই সংজ্ঞাই নারীকে সম্ভ্রমহানির গুহা থেকে বেরুতে দেয় না। এই সংজ্ঞায় যৌনতা ও যৌন আক্রমণের সকল ক্ষমতা চলে যায় পুরুষের কাছে। পুরুষ তখন ক্ষমতা ভেবে, আধিপত্য ভেবে আরও অধিক মাত্রা ও পরিমাণে ধর্ষণ করতে থাকে। অথচ বোকা নারীরা বোঝেন না, এই সংজ্ঞাটি মেনে নেওয়াই তাদের জন্য চরম অবমাননাকর।
সাম্প্রতিক একটি অনলাইন পত্রিকায় প্রকাশিত ফারজানা হুসাইনের লেখাটি আমার মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। ফারজানার লেখাটি ভালো। ফারজানা গল্পে, তথ্যে, তত্ত্বে নারীরা কীভাবে নির্যাতিত, কীভাবে দাম্পত্য র্ধষণের শিকার তা তুলে ধরেছেন। কিন্তু ফারজানা, পুরুষেরাও তো নির্যাতনের শিকার, প্রতিদিন কোটি কোটি পুরুষ যে ধর্ষিত হয়ে, যৌনাঙ্গের ব্যথা নিয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন, তা কি শুনতে পান?
দিন বদলেছে। নতুন দিনে, নতুন ভাবে ভাবতে হবে। গড়ে তুলতে হবে সমতার সমাজ ও পৃথিবী।বিশ্বাস করতে হবে উদারতায়, মানবতাবাদে। সমতায় বিশ্বাস করি। বিশ্বাস করি সকল মানুষই সমান। ফলে নারীর জন্য যা প্রযোজ্য, পুরুষের জন্য তা প্রযোজ্য হবে না কেন? যৌন আক্রমণ ও নির্যাতনের কেবল নারীই শিকার, না পুরুষও এর শিকার? পুরুষেরাও যৌন আক্রমনের শিকার হন। যৌন হেনস্থা ও ধর্ষিত হন। ধর্ষণের মৌলিক জায়গা তো ‘অনিচ্ছা সঙ্গম’। কোনও পুরুষও যদি কোনও নারী কর্তৃক সঙ্গমে বাধ্য হন, নারী যদি পুরুষের যৌন অনাগ্রহ, অনিচ্ছাকে উপেক্ষা করেন এবং অগ্রাহ্য করে তাকে রতিক্রিয়ায় বাধ্য করেন- তবে সেটিও ধর্ষণ। ধর্ষিত কেবল নারীই হন না। অনিচ্ছা, অনাগ্রহ, বাধ্য সঙ্গমে পুরুষও ধর্ষিত।
পুরুষ তখন তো আর পুরুষই নন। কোনও পুরুষ যদি সন্তান উৎপাদনে অসমর্থ হন, তখন চারপাশের মানুষ তার জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। পুরুষ যেন সন্তান উৎপাদনের বীজ। তাকে সন্তান উৎপাদন করতেই হবে। সে সন্তান উৎপাদন করতে বাধ্য। নারীর যৌন বিলাসে পুরুষ যদি অর্থপূর্ণ ভূমিকা না রাখতে পারে তাহলে সেই পুরুষ তখন নপুংশুক, কিম্পুরুষ-এমন অসভ্য, অশালীন কুৎসিত মন্তব্য করতেও ছাড়ে কি কেউ?